Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ

কু‌য়ে‌টে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ঝুঁকির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একজন অভিভাবক দরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ফারুক হোসেন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম কানুন অনুযায়ী ছোট ছোট কাজ থেকে কোন কিছুই ভাইস চ্যান্সেলরের অবর্তমানে করা সম্ভব নয়। একই সাথে যে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাজনিত ঝুঁকির মধ্যে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ আছে, এই ঝুঁকিগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একজন অভিভাবক দরকার।

তিনি বলেন, একজন গাড়ির চালক থাকলে তারপর আমরা তাকে সহযোগিতা করতে পারি। কিন্তু সেই জায়গায় অন্য কেউ বসে দায়িত্ব নিতে পারবে না।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিরসন এবং দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য অনতিবিলম্বে ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের দাবিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধনে বক্তৃতায় এ কথা বলেন। কুয়েট শিক্ষক সমিতি এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

বুধবার (২৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলা পাদদেশে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সাহিদুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটা ক্লান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একটা চলমান গাড়ি বা জিনিস হয়তো ২/১ মিনিট, ২/৪ দিনের জন্য কেউ রান করিয়ে নিতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টা মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ অবস্থায় আছে, মাঝখানে মধ্যবর্তী যে ভাইস চ্যান্সেলর এসেছিলেন, উনি যখন চলে গেছেন, তখনও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ অবস্থাতেই ছিল। বন্ধ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়ে। যার পর থেকে প্রতিটা কাজ, যে কাজগুলো শুরু করতে গেলেই ভিসি লাগবে, সে কাজগুলো কোনভাবে শুরু করা সম্ভব হয়নি। আমরা ভিসি’র জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। বিলম্বিত দেখে বিশ্ববিদ্যালয়, রেজিস্টার, ডীনদের পক্ষ থেকে মে মাসের শেষ থেকে দফায় দফায় সরকার, ইউজিসি, মন্ত্রণালয়, এগুলোতে চিঠি পাঠাতে শুরু করি। আমরা নিজেরা গিয়েও সাক্ষাৎ করি। সর্বশেষ ২৭ জুলাইও আমরা ইউজিসি’র সম্মানিত সদসের সাথে সাক্ষাৎ করে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করি। আমরা খুব দুঃখের সাথে অনুধাবন করলাম সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে উনারাও বুঝতে পারেননা যে, একজন অভিভাবক ছাড়া একটা বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চলতে পারে? দীর্ঘ সময় উনাদের সাথে আলোচনা করে আমরা আশ্বস্ত হলাম উনারা বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-কানুন নিয়ে ওনারা অবাক বিস্ময় প্রকাশ করলেন! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কানুন যা আছে, সেটাই নিয়েই আমরা দীর্ঘদিন সুনামের সাথে চলছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক সবার হতাশার কথা দেখতে পারছি। সব কিছুর মূলে আমরা তখন ছাত্রদের সাথে কথা বলি, অভিভাবকদের সাথে কথা বলা শুরু করি, যার ফলশ্রুতি আজকে সবাই একত্রিত হয়ে সরকারের কাছে এই বার্তাটা দেওয়ার জন্য, এই দাবিটা জানানোর জন্য, বাধ্য হয়ে আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে যে, একজন ভিসি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ কারণে আপনারা দ্রুত পদক্ষেপ নিন একজন ভিসি দেওয়ার জন্য।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৩ সালে বাংলাদেশের চারটি ইউনিভার্সিটি বিআইটি থেকে ইউনিভার্সিটিতে কনভার্ট হয়। ভিসি ছাড়া যে কোন কিছু চলে না, এর প্রথম ভুক্তভোগী হয় রুয়েট। ভিসি ছাড়া ঐ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় দুই মাসের অধিক সময় অচল অবস্থায় ছিল। বেতন ভাতাদি থেকে শুরু করে কোন ধরনের প্রশাসনিক কাজ হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর এই চারটি ইউনিভার্সিটি ‘৭৩ সালের এ্যাক্ট অনুযায়ী চলে। ‘৭৩ ‘র এ্যাক্টে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরগুলোর একাডেমিক এবং প্রশাসনিক উভয়ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। কিন্তু এর পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত কুয়েটসহ বাকি সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক স্বায়ত্তশাসন আছে, কিন্তু প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নেই। এই একাডেমিক স্বায়ত্তশাসনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই নিয়ম অনুযায়ী ভিসি’র অনুমোদন ছাড়া কোন কিছু করা সম্ভব নয়। এই জন্য আমাদের দ্রুত ভিসি দরকার’।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত পাঁচ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা চলছে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি, পাশাপাশি আমাদের অভিভাবকেরাও উদ্বিগ্ন। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আসুক। শিক্ষা কার্যক্রম এবং আমাদের পরীক্ষা যেগুলো বাকি আছে সেগুলো দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সরকারের কাছে আমাদের দাবি দ্রুত ভিসি নিয়োগ দিয়ে কুয়েটের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. সুলতান মাহমুদ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো. হারুন অর রশিদ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিথী আক্তার, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সায়েম প্রমূখ।

এছাড়া মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড.ইলিয়াস, ইসির বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মনির হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড.আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার, এনার্জি সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. হাসানসহ অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ও অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা গেজেট/লিপু/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন